মালদ্বীপের আকর্ষণীয় জায়গাসমূহ
স্বর্গীয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি,মালদ্বীপ বা মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র এবং পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু দেশ ।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলচে পানির এই দেশটির সর্বোচ্চ উচ্চতা ২.৩ মিটার।ভৌগোলিক দিক থেকে মালদ্বীপ ভারতের দক্ষিণে অবস্থিত এবং ভারত থেকে ২,১৪২ কিলোমিটারের দূরত্বের এই দেশে রয়েছে এক হাজার দুই শ’রও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ। আর মানব বসতি গড়ে উঠেছে ১৯২ টিতে। 90,000 বর্গ কিলোমিটার (35,000 বর্গ মাইল) আয়তনের এই দেশটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেশগুলির মধ্যে একটি যার জনসংখ্যা প্রায় ৩,৫০,০০০ । এই জনসংখ্যার প্রায় বেশিরভাগই মুসলিম ধররমাবলম্বী।
বর্তমানে মালদ্বীপের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্প হচ্ছে সবচেয়ে বড় মাধ্যম।দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানীয় শিল্পক্ষেত্র হিসেবে রয়েছে মৎস্য শিকার।। আয় আমদানি ও পর্যটন সম্পর্কিত কর থেকেই আসে সরকারি কর রাজস্বের 90%। সরাসরি এবং পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার কারণে দেশটির পর্যটন অর্থনীতির সর্বাধিক বিকাশ ঘটেছে।কিন্তু 1970 দশকের শুরুর দিকে মালদ্বীপ পর্যটকদের কাছে প্রায় অজানাই ছিল। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, 1972 সালে পর্যটন শিল্পের উন্নতির ফলে আমূল পরিবর্তন এসেছে , যার ফলে মৎস্য শিল্প থেকে পর্যটনের উপর নির্ভযোগ্যতা বেড়েছে।ফলশ্রুতিতে এটিই হয়ে উঠেছে আয়ের মূল উৎস।2008 সালের হিসাবে,বছরে600,000 এরও বেশি পর্যটক মালদ্বীপের 89 টি রিসোর্টে ভ্রমণ করে এবং 1972 থেকে 2007 সাল পর্যন্ত রিসর্টের সংখ্যা 2 থেকে বেড়ে 929 হয়েছে। 2007 সাল পর্যন্ত মালদ্বীপে ভ্রমণকারী পর্যটকের সংখ্যা 8,380,000 জন ।১ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক ২০১৪ সালে দ্বীপগুলিতে ভ্রমণ করেছেন।
সার্কের অন্তর্ভুক্ত এই দেশ, মালদ্বীপ পর্যটকদের কাছে ভীষণ প্রিয় । বিশেষ করে দ্বীপ রাষ্ট্র হওয়ার কারণে পশ্চিমা পর্যটকদের কাছে মালদ্বীপ খুবই জনপ্রিয় পর্যটনস্থল ৷ পশ্চিমা নবদম্পতিরা মালদ্বীপ ভ্রমণ খুবই উপভোগ করেন৷ তাছাড়া কিছু সংস্কারের কারণে বর্তমানে কম খরচে ভ্রমণের সুযোগ সুবিধা থাকায় সবার কাছেই মালদ্বীপ হয়েছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
মালদ্বীপের আকর্ষণীয় জায়গাসমূহঃ
মালেঃ
মালদ্বীপের রাজধানী মালে দেশটির সবচেয়ে বড় শহর এবং জনপ্রিয় স্থানগুলির একটি। দেশের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসবে পরিচিত এই শহরটি প্রায় 5.8 বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। অবাক করা বিষয় হলোপৃথিবীর স্বর্গরাজ্য মালদ্বীপের সবচেয়ে জনবহুল এই দ্বীপটি বিশ্বেরও অন্যতম জনবহুল শহর ।হুকুরু মস্ক, মালে মাছ বাজার, মালে জাতীয় যাদুঘর, সুনামি স্মৃতিস্তম্ভ এবং মুলি আজ প্যালেস মালেরজনপ্রিয় কিছু স্থান। প্রবাল পাথর দিয়ে নির্মিত ‘ওল্ড ফ্রাইডে মসজিদ’ বলে খ্যাতহুকুরু মস্ক সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপত্য ভবন। খুব ছোট এই দ্বীপটিকে বলা হয় কিংস আইল্যান্ড। ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে চাইলে পুরো মালে ঘুরে আসা সম্ভব।
বানানা রিফঃ
বানানা রিফকে বিশ্বের সেরা ডাইভিং সাইটগুলির মধ্যে অন্যতম বলা যায় যা উত্তর মালে এটল-এ অবস্থিত। আর মালদ্বীপে আবিষ্কৃত প্রথম ডাইভিং সাইটও এটি।গথুগিরি নামেও পরিচিত ডাইভিং সাইটটি।এটি মূলত সমুদ্র গর্ভে অবস্থিত তিনশ মিটার দীর্ঘ প্রবাল প্রাচীর ।উপরের দিক থেকে এটারদৃশ্যান আকার অনুযায়ী এর নামকরণ করা হয়েছে। চোখ ধাঁধানো নানা রং ও বিভিন্ন আকৃতির কোরাল এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলবে এখানে।
আলিমাথা আইল্যান্ডঃ
পূর্ব মালদ্বীপে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি আকর্ষণ রয়েছে।সম্পূর্ণ সবুজে ঘেরা এই রাজ্যে পর্যটকরা আকাশ, সমুদ্র আর সবুজকে সঙ্গে করে চাইলে হারিয়ে যেতে পারেন অন্য এক জগতে।বিশ্বমানের ডাইভিং এরপাশাপাশি সমুদ্র তলদেশের অ্যাকুয়ারিয়াম আর একটি আকর্ষণ। এখানকার সৈকতে এসে সূর্যাস্ত না দেখলেই নয়। এত কিছুর সাথে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে আছে ন্যাশনাল মিউজিয়াম,জুমহরি ময়দানের মতো আরো অনেক দর্শনীয় স্থান।
হুলহুমালে আইসল্যান্ডঃ
রাজধানী মালের তীরঘেষেই হুলহুমালে আইসল্যান্ড। পাশেই ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্থান যা এই স্বর্গীয় দ্বীপগুলির প্রধান যাতায়তস্থল। অপরূপ সৌন্দর্যের এই দ্বীপ মালদ্বীপের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।
মাফুসি আইল্যান্ডঃ
মালদ্বীপের দক্ষিণ এটল-এ অবস্থিত বৃহত্তম স্থানীয় দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম দ্বীপ মাফুশি আইসল্যান্ডে বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং প্রশস্ত 5 তারকা হোটেলের আধিক্য না থাকলেও স্পার্কলিং ওয়াটার, হোয়াইট স্যান্ডি সৈকত, চমত্কার রিসোর্ট এটিকে সেরা দ্বীপগুলির একটি করে তোলে।সমস্ত উদ্বেগ ভুলে চমৎকার কিছু সময়কাটাতে নির্জন এই দ্বীপটির কোন তুলনা নেই ।মালে থেকে সাতাশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ডুব সাইট এগড়ে তুলা হয়েছে সামুদ্রিক বিনোদনের ব্যবস্থা। যেমন উইন্ড সার্ফিং, স্কুবা ডাইভিং, কায়াকিং ও প্যাডেল নৌকাসহ আরও অনেক রোমাঞ্ছকর সুযোগ। এ ছাড়াও রয়েছে তিমি, হাঙ্গরসহ রয়েছে বিরল প্রজাতীর সব মাছ।
এইচপি রিফঃ
মালদ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি ‘এইচপি রিফ’। নর্থমালে অ্যাটলে অবস্থিত এইচপি রিফ এর সমুদ্রতলে অবস্থিত বড় বড় প্রবালের পাহাড় দেখতে উত্সুক পর্যটকদের ভিড় সারা বছরই লেগেই থাকে।
বিয়াধু আইল্যান্ডঃ
দক্ষিণ মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় 1.8 কিলোমিটারদূরে অবস্থিত বিয়াধু আইল্যান্ডকে মালদ্বীপের সর্বোত্তম প্রাকৃতিক দৃশ্যের দ্বীপ বলে অ্যাখ্যায়িত করা যায়। সর্বাপেক্ষা নিরিবিলি রিসোর্টের এই দ্বীপের গভীর জলে ডাইভ দেয়ার সুযোগ রয়েছে ।ছোট এই দ্বীপটিতে ডুব সাইট এর সংখ্যা প্রায় পঁয়ত্রিশটিরও বেশি।
ভেলিগান্ডু আইল্যান্ডঃ
বাইশ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত ভেলিগান্ডু আইল্যান্ড মালদ্বীপের সেরা সৈকতগুলির মধ্যে একটি। উত্তর অ্যারি এটলে অবস্থিত এই দ্বীপ যুক্তিসঙ্গতভাবে ছোট হওয়া সত্ত্বেও, দ্বীপটি বিস্ময়কর সবুজ প্রকৃতি দিয়ে পূর্ণ যা প্রচুর প্রশান্তিতে ভরিয়ে তোলে ।ভেলিগান্ডু আইল্যান্ড বিচ এর অনন্য সাদা বালি এবং নীল জলের সাথে সাথে প্রচুর সমুদ্রতীরবর্তী ভিলা এবং সুয়েট এর জন্য বহু দম্পতির কাছে একটি বড় আকর্ষণ।বিলাসবহুল বার,উইন্ডসার্ফিং, কাতামারান স্যালিং,রিসোর্ট স্কুবা ডাইভিং, প্যারাসেইলিং, জেট স্কিইংএবং ক্যানোইং এই দ্বীপের বৈশিষ্ট্য।
উথিমু আইল্যান্ড :
উথিমূ আইল্যান্ড মালদ্বীপের উত্তরে দিকে অবস্থিত দ্বীপগুলির মধ্যে একটি। এই দ্বীপেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুলতান মোহাম্মদ ঠাকুরফানু ।প্রিয়স্বদেশকে পর্তুগিজদের হাত থেকে রক্ষা করতে সুলতান মোহাম্মদ ঠাকুরফানু পনেরো বছর যুদ্ধ করেছিলেন।সুলতান মোহাম্মদ ঠাকুরফানু বড় হয়েছিলেন উথিমূ আইল্যান্ডের উতিমু গান্ডুভারু নামের একটি কাঠের প্রাসাদে।তার এই বীরত্বের নিদর্শন ম্পর্কে জানতে হলে ঐতিহাসিক জায়গাটিতে ভ্রমণ অপরিহার্য।
মান্টা এরিয়াঃ
ডাইভিং সাইট হিসেবে বেশ খ্যাতিসম্পন্ন‘মান্টা এরিয়া ‘ মালদ্বীপে আগত পর্যটকদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ডুবরির বেশে যারা সমুদ্রতলে গিয়ে এর রূপলাবণ্য দেখতে চান, তাদের জন্য প্রচুর মান্টা এবং ওরাসেস নামকহাঙর আকৃতির বিশালকা্র সামুদ্রিক মাছ।
Details are below: Best travel and tourism agency in Dhaka