সিঙ্গাপুরের আকর্ষণীয় স্থানসমূহ যা আপনাকে মুগ্ধ করবে
পুরোপুরিভাবে দুর্নীতিমুক্ত, বিলাসবহুল, আধুনিকতা, পরিচ্ছন্নতা আর পর্যটনে সমৃদ্ধশালী দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র ও একটি পরিপূর্ণ উন্নত দেশ সিঙ্গাপুর। ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর দেশটি মাত্র ৪০-৫০ বছরে যুগোপযুগী পরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেদেরকে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছে। একটি এলোমেলো , নিয়ন্ত্রনহীন এবং সংঘাতে পরিপূর্ণ দেশ থেকে বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বিলাসবহুল দেশে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্বসেরা এয়ারপোর্টগুলোর একটি সিঙ্গাপুরের এয়ারপোর্ট । মালয় উপদ্বীপের নিকট অবস্থিত এই দেশের বাণিজ্যিক পোর্টটি এখন বিশ্বের ব্যস্ততম পোর্ট।৭১৬ বর্গ কিলোমিটারের এই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেশ ভ্রমণে পাওয়া যাবে ইউরোপ ভ্রমণের স্বাদ। ‘সিঙ্গাপুর ফ্লায়ার’ নামের চরকিটিতে চড়লে একনজরে দেখা যাবে পুরো শহরটি।
বিশ্বের ২২ তম ধনী এই দেশে সারা বছরই পর্যটকের সমাগম ঘটে। তবে জুলাই এবং সেপ্টেম্বর মাসে সেল ফেস্টিবাল ও ফুড ফেস্টিবালে যোগ দেওয়ার সুযোগ মিলবে।প্রায় সারা বছরই এখানকার তাপমাত্রা এবং আদ্রতা বেশি থাকে।
সিঙ্গাপুরের আকর্ষণীয় স্থানসমূহঃ
সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ারঃ
সিঙ্গাপুরের আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল একশত পয়ষট্টি মিটার উচ্চতার‘সিঙ্গাপুর ফ্লায়ার’।এই ফ্লায়ারকে বিশ্বের বৃহত্তম নাগরদোলা বলা যায়। দুইশত চল্লিশ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি করা এই নাগরদোলাটি ২০০৮ সালে সকলের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। রাতের বেলা এই নাগরদোলায় চড়ে আকর্ষণীয় আলোকোজ্জ্বল সিঙ্গাপুর দেখার সাথে সাথে বিশেষ ব্যাবস্থার মাধ্যমে নৈশভোজও করা যায়।
সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানাঃ
প্রায় ৩০০ এরও অধিক প্রজাতির বন্যপ্রাণী নিয়ে তৈরি এই চিড়িয়াখানাটিতে প্রতিবছর প্রায় ১.৬ মিলিয়ন দর্শনার্থী আসেন।ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর ১৯৭৩ সালে সিঙ্গাপুরের হয়ে সর্বসাধারণের জন্য উনমুক্ত করে দেওয়া হয়। ১১ টি জোনে বিভক্ত এই চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণীদের খাঁচায় আবদ্ধ না করে এখানে মুক্তভাবে বিচরন করা্র ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ক্যাবল কারে চড়ে ঘুরতে ঘুরতে দেখা যাবে বাঘ , সিংহ, ওরাংওটা, গিরগিটির মত কমোডো ড্রাগনসহ বিপন্ন প্রজাতির আরও অনেক প্রাণী।২০১৩ সালে জলজ সাফারিপার্ক এটিকে আরো সমৃদ্ধশালী করেছে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ পান্ডা শো এর পাশাপাশি কৃত্তিম উপায়ে তৈরি করা বন্য প্রাণী দেখা যাবে রেইন ফরেস্ট লুমিনা-তে।
এটাই এশিয়া মহাদেশের সর্বপ্রথম ভারচুয়াল প্রাণী প্রদর্শনী যেখানে প্রযুক্তির সাহায্যে জ্যান্ত প্রাণীর মতই নড়াচড়া ও শব্দ করা দেখানো হয়।
সেন্টোসা আইল্যান্ডঃ
আনন্দ এবং মজা করে ঘণ্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়ার জন্য সেন্টোসা আইল্যান্ড একটি উপযুক্ত জায়গা। এই দ্বীপে যাওয়ার জন্য জলপথ এবং স্থলপথ উভয়ের ব্যবস্থা আছে। সবচেয়ে রোমাঞ্ছকর হল মাউন্ট ফ্যাবার থেকে ক্যাবল-কার এ করে সিঙ্গাপুর হারবারের এরিয়াল ভিউ উপভগ করতে করতে সেন্টোসা দ্বীপে পৌঁছানো। শিশুদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি আদর্শ জায়গা। তাছাড়া ঘুরার জন্য আরও রয়েছে ভিভো সিটি মল যেখানে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্র্যান্ডের দোকানগুলির দেখা মিলবে।
সৈকতের জন্য জনপ্রিয় না হলেও এখানকার সিলোসো সৈকত উপভোগ্য।এখানেই রয়েছে বিখ্যাত মেরিলন এর মূর্তি, সিলোসোদুর্গ, ওয়াটার পার্ক এবং ইউনিভার্সাল স্টুডিও সিঙ্গাপুর।
ইউনিভার্সাল স্টুডিওটিকে সাজানো হয়েছে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন থিমে। রয়েছে রোমাঞ্চকর সব রাইডের ব্যবস্থা। রিভেঞ্জ অব দ্যা মামি সিনেমার থিমের রোলার কোস্টারটি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্যক্তিত্বের অবয়বে তৈরি সব মোমের পুতুলের সাথে সেলফি তুলার সুযোগ রয়েছে মাদাম তুসো জাদুঘরে। তাছাড়া সাইকেল নিয়ে ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে পাসির রিস পার্ক।
ম্যারিনা বেঃ
চোখ ধাঁধানো লেজার শো এবং রাতের লাইটিং দেখার জন্য অসংখ্য পর্যটকের ভীড় জমে ম্যারিনা বে তে।তাছাড়া এখানে হোটেল, শপিং মল, ফুড কোর্ট, ইনফিনিটি পুল, ক্যসিনো সহ বিনোদনের অনেক রকম ব্যবস্থা রয়েছে।
বোটানিক গার্ডেন:
১৮২২ সালে স্যার স্ট্যাম্ফোর্ড রেফলস এর তৈরি সিঙ্গাপুরের অনতম সৌন্দর্য এই বোটানিক গার্ডেনটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের আওতাভুক্ত। প্রায় ষাট হাজার প্রজাতির গাছ ও পশুপাখি এবং প্রায় এক হাজার প্রজাতির অর্কিড রয়েছে এই বাগানে। প্রজাতিভেদে বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন নামের বাগান যেমন বনসাই বাগান ভাস্কর্য, ইকো গার্ডেন, অর্কিড গার্ডেন, ইকো হ্রদ রয়েছে। অর্কিড গার্ডেনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অর্কিডগুলোর সৌন্দর্য দেখে পার করে দেওয়া যায়।
জুরং বার্ড পার্ক:
সিঙ্গাপুরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র এই জুরং বার্ড পার্কটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ পার্ক। মোট উনপঞ্ছাশটি ভাগে ভাগ করা এই পার্কে তিনশত আশি প্রজাতির প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি পাখি রয়েছে। তাছাড়া বিখ্যাত আভাইরি জলপ্রপাত,একশ ফুট উঁচু কৃত্রিম জলপ্রপাত রয়েছে পার্কটিতে। পায়ে হেঁটে অথবা ক্যাবল কারে চড়ে পার্কটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীব বৈচিত্র্য উপভোগ করা যাবে।
গার্ডেনস বাই দ্য বেঃ
দুইশত পঞ্চশ একর জুড়ে তিনটি বৃহৎ ওয়াটার ফ্রন্ট বাগাননিয়ে শান্ত সবুজ এই বিশালাকার পার্ক গার্ডেন বাই দ্যা বে গড়ে উঠেছে। মেরিনা রিজারভেয়ারের পাশেই অবস্থিত এই একটি অত্যাধুনিক বোটানিক্যাল গার্ডেন পার্কটি পারিবারিক ভ্রমণের জন্য আদর্শ স্থান। এখানকার সুপারট্রি নামের বিশাল কাঠামোর শরীর বেয়ে উঠে গেছে প্রায় ২০০ জাতের লতা গাছ যা রাতের বেলায় নানা রঙের আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়ে অপরূপ লাগে। এই বাগানের গার্ডেন র্যাপসডি নামের প্রদর্শনীতে সুপারট্রি গুলোর চূড়ায় আলোর খেলা ও শব্দ বিন্যাস সকলকে বিমোহিত করবে।
গার্ডেন বাই দ্যা বে এর একটি আশ্চর্য আকর্ষণ ক্লাউড ফরেস্ট ডোম ।ফ্লাওয়ার ডোম হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গ্রিন হাউজ।এই কাঁচের তৈরি ঘরে কৃত্তিম ভাবে একশত ষাট প্রজাতির প্রায় বত্রিশ হাজার গাছপালা ও লতাগুল্মের সমাহার রয়েছে।
নাইট সাফারিঃ
নিশাচর প্রাণীদের অবাধ বিচরণ নিয়ে তৈরি বিশ্বের সর্বপ্রথম সাফারি পার্কনাইট সাফারি । প্রায় দুই হাজার পাঁচশতর বেশি নিশাচর প্রাণীএই পার্কে রয়েছে।
Details are below: Best travel and tourism agency in Dhaka