১১ টি থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা যা আপনাকে মুগ্ধ করবে
স্বল্প খরচে ভ্রমণের জন্য শুধু এশিয়া মহাদেশেই নয় পুরো বিশ্বের পর্যটকদের কাছেই থাইল্যান্ড অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি দেশ। পর্যটনবান্ধব এই দেশটির পর্যটনশিল্প গড়ে উঠেছে মূলত সমুদ্র সৈকতকে ঘিরেই। ঢাকা থেকে মাত্র ৩ ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় থাইল্যান্ড বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসু দের পছন্দের তালিকায়ও শীর্ষে রয়েছে । সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি পাহাড়, ব্যস্ত নগরী, আধুনিক শহর, বন্যপ্রাণীর জাতীয় উদ্যান, অসংখ্য ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান, সারি সারি বৌদ্ধ মূর্তির সমারোহ এবং দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ও রাজধানীর নাম ব্যাংকক এবং মোট জনসংখ্যার প্রায় শতভাগ ই থেরবাদী বৌদ্ধধর্মের অধিকারী। তাছাড়া থাইল্যান্ডে মালয়, চীনা, মং ও কারেন নামে আদিবাসী পাহাড়ি জাতিরও বসবাস রয়েছে।
থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাসমূহঃ
ব্যাংককঃ
থাইল্যান্ড উপসাগরের কাছাকাছি, চাও ফেয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম কর্মব্যাস্ত এবং বৃহত্তম আধুনিক শহর এই ব্যাংকক। এখানকার জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নাফ্রালারন রোডের প্রাচীন রাজপ্রাসাদ। প্রায় ১ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই প্রাসাদ চত্বরে অতীত ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরতে রয়েছে পান্না পাথর দিয়ে বানানো বুদ্ধের মূর্তি। শুধুমাত্র একটি জেড পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছিল এই মূর্তিটি। নানা ধরণের ফ্রেসকো ও সূক্ষ্ম কারুকাজের ভাস্কর্য দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছিল বৌদ্ধ মন্দিরটির ভেতরের ও বাইরের দেয়াল। কম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাটের মিনিয়েচার এর পাশাপাশি প্রাসাদ চত্বরে আরও কয়েকটি চমৎকার মন্দির আছে।
গগনচুম্বী অত্যাধুনিক স্থাপত্য, সৃজনশীল আর্ট গ্যালারি, রাজপ্রাসাদ, জাদুঘর ও পার্ক সবকিছু মিলিয়ে ভ্রমণের জন্য ব্যাংকক একটি আদর্শ শহর। তাছড়া আধুনিক মেগামল গুলো ছাড়াও এখানে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ভাসমান বাজার। এখানকার খাবারের ব্যবস্থাতেও দেখা যায় ব্যাপক বৈচিত্র্য। বিলাসবহুল রেস্তোরাঁর পাশাপাশি রয়েছে স্ট্রিট ফুডের সমাহার। সারাদিনের ঘুমন্ত ব্যাংকককে দেখার পর আধুনিক ও রহস্যময় রাতের ব্যাংককে আপনি পাবেন নাইট ক্লাব, লাইভ মিউজিক, রুফটপ বার,ককটেইল বার এবং মুয়া থাই ফাইটস নামের ক্লাবসহ আরও অনেক কিছু।
গ্র্যান্ড প্যালেস:
ব্যাংককের স্থাপত্যের অন্যতম সুন্দর নিদর্শন গ্র্যান্ড প্যালেস । চারটি প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত এই প্রাসাদটির মঠ, মিনার রাজা রামা ১ নির্মাণ করেছিলেন । গ্র্যান্ড প্যালেসের প্রাঙ্গণে রয়েছে ওয়াত কায়েও বা এমারেল্ড বুদ্ধ। পান্না সবুজ বর্ণের বুদ্ধের মূর্তি মন্দিরের প্রধান ভবনটি । তাছাড়াও রাজ্যাভিষেকের পটমণ্ডপ, রাজকীয় অলংকার ও মুদ্রা, রাজপোশাক, রাজ দরবারে ব্যবহৃত জিনিস ইত্যাদি রয়ছে ।
ওয়াত অরুন:
রাজা তৃতীয় রামার কৃতিত্বের স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত থাইল্যান্ডের ওয়াট অরুন যা নির্মিত হয়েছিল ক্ষমের শৈলীতে । সূর্যাস্তের সময় শ্রেষ্ঠ দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে ব্যাংককের পর্যটন আকর্ষণ এই মন্দিরটিতে যা ঊষার মন্দির হিসাবেও পরিচিত ।
ওয়াট ফো:
প্রায় ১৫০ ফুট লম্বা এবং ৪০ ফুট উঁচু, সম্পূর্ণ সোনার পাতে মোড়ানো আধশোয়া ভঙ্গিতে গৌতম বুদ্ধের এক বিশালাকার মূর্তি রয়েছে ব্যাংককের প্রাচীন এই বুদ্ধ মন্দিরটিতে । অসাধারণ এই মূর্তিটির পা ও চোখদুটি মুক্তো দিয়ে তৈরি।এছাড়া ওয়াটফোতে অনেকগুলি প্যাগোডা, বোধিবৃক্ষ ঝর্ণা , অসংখ্য বৌদ্ধমূর্তি রয়েছে।
ফুকেটঃ
ব্যাংকক থেকে প্রায় ৮৬০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত থাইল্যান্ডের বৃহত্তম দ্বীপ এবং বিশ্ব বিখ্যাত সমুদ্র সৈকতগুলির সমাবেশস্থল ফুকেট। এই বহুরূপী দ্বীপটি থাইল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। হাইকিং, গো কার্টিং, ওয়াটার স্পোর্টস, মাছ ধরা, স্নোরকেলিং, জেট স্কিং, বার, ক্লাব ফুকেটের বিনোদন ব্যবস্থার মাধ্যম। অসাধারণ সমুদ্র সৈকতগুলির মাঝে ফ্রিডম বিচ, কাঠু বিচ, কেরন বিচ এর যে কোন একটি অথবা ফি ফি আইল্যান্ড হতে পারে আপনার প্রিয় ভ্রমণস্থল। পাশপাশি প্রমথেপ কেইপে যেতে পারেন সূর্যাস্ত দেখার জন্য । ফুকেটের বালুময় সৈকত , সাগরের ফেনা তুলা ঢেউয়ের নীল জল, পাহাড় জঙ্গল ঘেরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ ছাড়াও সৌন্দর্যের আরো একটি আকর্ষন কেন্দ্র আন্দামান সাগরের চুনাপাথরের পাহাড়। চুনাপাথরের পাহাড় দেখতে হলে নৌকা নিয়ে ‘ফাং-বে’তে যেতে হবে সৈকত থেকে। অনেক বিখ্যাত সিনেমার শুটিং করা হয়েছে এই বৈচিত্রময় চুনাপাথরের পাহাড়গুলোতে যে কারণে একটি দ্বীপের নামকরণও হয়েছে ‘জেমস বন্ড আইল্যান্ড’।
সমুদ্র সৈকতকে বিরতি দিয়ে শহর ঘুরে দেখা মিলবে পুরনো সব চমৎকার স্থাপনা। তাছড়া বান টিলাঙ্কা ও ফুকেট ট্রিকআই মিউজিয়াম রয়েছে মজার মজার সব ছবি তোলার জন্য।
পাতায়া সমুদ্র সৈকত:
অজস্র দীপপুঞ্জের দেশ থাইল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে পাতায়া সমুদ্র সৈকত। ব্যাংকক থেকে ১৪৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই সৈকতে বাসে করে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ২ ঘন্টা। সৈকত পাড়ের সাদা নরম বালু, সুবিশাল সবুজে ঘেরা পাহাড়ের সারি, বিস্তৃত নীল সমুদ্র আর এর জলরাশিতে চরে বেড়ানো রঙ-বেরঙের নানা রকমের ছোট ছোট নৌকাসহ সমুদ্রশহর পাতায়ার পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে সৌন্দর্য। ভ্রমণের জন্য নুচ বোটানিক্যাল গার্ডেন, কোরাল আইল্যান্ড , বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক প্রাণী ও গভীর সমুদ্রে মাছের বৈচিত্র দেখার জন্য মনস্টার অ্যাকুরিয়াম, ওয়াকিং স্ট্রীট , রিপ্লিসের বিলিভ ইট অর নট ইত্যাদি পারিবারিক সময় কাটানোর জন্য অন্যতম বিনোদনের স্থান। খুব বড় না হলেও অত্যন্ত সুন্দর করে সাজানো গোছানো এই সী বিচে পর্যটকদের আর্কষিত করার সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে। প্যারাগ্লাইডিংয়ের জন্য বিচ রোড থেকে স্পিডবোটে করে সমুদ্রের গভীরে এক প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো যায়।
বীচ রোডে খাবার জন্য অসংখ্য রেস্তোরাঁ রয়েছে যা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সব ধরণের রেস্তোরার পাশাপাশি খাঁটি বাঙালি রেস্তোরার সন্ধান মিলবে এখানে।
ইয়াওয়ারটঃ
বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের আবাসস্থল থাইল্যান্ডের ইয়াওয়ারট। প্রায় ২০০ বছর পুরনো একটি চীনা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন খাবারেরস্বাদ উপভোগ করার জন্য শুধু বিদেশি পর্যটকগণই ননঅনেক থাই নাগরিকরাও ভীড় জমান । বহু বছরের চীনা সংস্কৃতির পাশাপাশি খাবারগুলো স্বাদও অতুলনীয়। প্রতিদিন ইয়াওয়ারট এর রাস্তায় শত শতবিক্রেতারা হাজার হাজার মানুষকে খাবার পরিবেশন করে। প্রতিটি খাবারের স্বাদই দীর্ঘ চীনা এবং থাই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করে।
সাদুয়াক ফ্লোটিং মার্কেট:
ব্যাংককসহ অন্যান্য সব গুরুত্বপূর্ণ শহরের কাছাকাছি রয়েছে থাইল্যান্ডের আর এক আকর্ষণ ভাসমান বাজার এবং সবথেকে বিখ্যাত দামনোয়েন সাদুয়াক ভাসমান বাজার । এই বাজার ব্যাংকক থেকে ৯০ কি.মি. দূরে অবস্থিত ৷ শাক-সবজি, ফলমূল, সদ্য তৈরি খাবার, ঘর সাজানোর জন্য নানা রকমের ছবি, হস্তশিল্প, ফুলদানি, মূর্তি, নকল ফুল সব কিছুরই অঢেল আয়োজন এই ভাসমান বাজারে ।
চিয়াং মাই:
থাইল্যান্ডের প্রধান উত্তরাঞ্চলীয় শহর এবং রাজধানী হিসেবে খ্যাত চিয়াং মাই । ব্যাংকক থেকে সাতশো কিলোমিটার দূরে হিমালয়ের পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত এই জায়গাটিতে রয়েছে ১৩০০ শতকের প্রায় ৫০০ এরও বেশি মন্দির , অসংখ্য জলপ্রপাত , পীচ ও স্ট্রবেরী বাগান ,পাহাড়ি উপজাতি, গুহা,থাই হাতির অভয়ারণ্য এবং সবুজে ভরা জঙ্গল ।সংস্কৃতি এবং প্রকৃতিরএক অপূর্ব সংমিশ্রণ এই মন্ত্রমুগ্ধকর শহরটি । তাছাড়া এখানকার রাত্রিকালীন চিড়িয়াখান, জঙ্গলের ভেতরে হাইকিং বিনোদনের মাধ্যম।
আয়ুথায়াঃ
ইউনেস্কো তালিকাধীন থাইল্যান্ডের সবচেয়ে পুরাতন শহর আয়ুথায়া। ব্যাংকক থেকে সহজেই পৌঁছানো যায় আয়ুথায়া তে ।সায়ামের স্বর্ণযুগের প্রাচীন শৈল্পিক ধ্বংসাবশেষ ইতিহাস প্রেমীদের জন্য মূল আকর্ষণ । ওয়াট রাটচাবুরানা ,গাছের শেকড় দিয়ে আবৃত বৌদ্ধ মূর্তির মাথা সম্বলিত ওয়াট মাহাতাত মন্দির, ওয়াট সি সামফেট এবং পুরাতন ডাচ এবং পর্তুগিজ এলাকা এখানকার ভ্রমণস্থল। কেউ চাইলে সাইকেল কিংবা স্কুটার ভাড়া নিয়ে ঘুরে দেখতে পারবে পুরো আয়ুথায়া ।
ক্রাবিঃ
থাইল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্তের সবচেয়ে সুন্দর ও জনপ্রিয় প্রদেশ ক্রাবি। দ্বীপ ভ্রমণের আগ্রহ থাকলে ক্রাবি হওয়া উচিত প্রথম পছন্দ। অসংখ্য দ্বীপপুঞ্জের মাঝে কোহ ফি ফি দ্বীপকে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপ বলা হয় । “মায়া বে” আর “ফি ফি ভিউ পয়েন্ট” এই দ্বীপেরর সৌন্দর্যের রহস্য।